আমি অল্প সময়ের জন্য নগর ভবনে যাই। আপনারা পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
দক্ষিণ নগর ভবনে বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক ও অস্থিরতা। মাঝে মধ্যেই ঘটছে কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনা। এরই মধ্যে ৭ জন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। প্রতিদিনই প্রভাব বিস্তারের জন্য রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নেতারা মহড়া দিচ্ছে নগর ভবনে। নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এতে করে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।
জানা গেছে, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর দুদিন আগে গোপনে দেশ ছাড়েন সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সরকার পতনের পর থেকে দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৬৭ জন কাউন্সিলর আত্মগোপনে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন দফতর থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারাও রয়েছেন। দৈনিক জনতার অনুসন্ধানে এমনটি জানাগেছে।
নগর ভবনের সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানাগেছে, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এস এম মোশারফ হোসেন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান ও সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মেহেদী হাসান নগর ভবন নানাভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, মোশারফ, আরিফুজ্জামান ও মেহেদীর পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা সৈয়দ মুকিতুল হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইহসান মামদুদ তাদের অনুসারীদের নিয়ে নগর ভবনে মহড়া দিচ্ছেন।
সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রশাসক মহ. শের আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি অল্প সময়ের জন্য নগর ভবনে যান। পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর করপোরেশনের পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের নগর ভবনে ঢুকতে পারছিলেন না। ২০ আগস্টের পর নগর ভবনে যাওয়া শুরু করেন। এর মধ্যে একদিন ধাওয়া দিয়ে তাকে নগর ভবন থেকে বের করে দেয়া হয়। তবে অপরদিকের শ্রমিক নেতাদের একটি অংশের সহযোগিতায় তিনি এখন নিয়মিত অফিস করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির একাধিক সূত্র বলছে, সংস্থাপন শাখা-৩ এর সহকারী সচিব রোকনুজ্জামানকে ২৫ আগস্ট মারধর করেন মেহেদী ও আরিফুজ্জামানের অনুসারীরা। পরে ২৭ আগস্ট এই কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া হয়েছে।
এদিকে এসব ঘটনার পরেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন দাবি আদায়ের হিড়িক চলছে। প্রতিদিন ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে দাবি আদায়ে অনেকেই মিছিল করছেন, কেউ কেউ নেতৃবৃন্দ নিয়ে দিচ্ছেন মহড়া।
এদের মধ্যে রয়েছেন দুর্নীতি বা পেশাগত অসদাচরণের জন্য পদোন্নতি পাননি এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন যারা। এর ফলে যারা সৎ এবং পদোন্নতি পাননি এমন ব্যক্তিদের আবারও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেদের প্রভাব জাহির করতে দলবল নিয়ে নগর ভবনে মহড়া দিচ্ছেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা। এর ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে আতঙ্ক ও অস্থিরতা।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট ডিএসসিসির একটি উন্নয়নের দরপত্র জমা দেয়া নিয়ে একজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়। আর লাঞ্ছিত করা হয়েছে ৭ জন কর্মকর্তাকে। এছাড়া এক কর্মকর্তাকে সবার সামনে মারধর করা হয়। এর ফলে দাফতরিক কাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আর কিছু কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা, এমন অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির করপোরেশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিএনপি সমর্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের একাধিক নেতা বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছে। তাদের না জানিয়ে কাউকে বদলি করা যাবে না। পদোন্নতি ও পদায়ন বন্ধ করা যাবেনা।
তিনি বলেন, বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী নগর ভবনে করপোরেশনের যে অবস্থার সৃষ্টি করছেন, তাতে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ঠিকাদারি, ইজারাসহ নানা সুবিধা দিতে চাপ দিচ্ছেন তারা। এভাবে চলতে পারে না। বিএনপির সম্মান নষ্ট করতে তারা মাঠে নেমেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিগত ১৭ বছর থেকে আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যারা সৎ থাকায় রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি পাইনি। এরা আবারও বঞ্চিত হবেন। কারণ বিএনপির অঙ্গসংগঠন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাসহ বিএনপির স্থানীয় নেতারা যা শুরু করেছেন তাতে আমরা আবারও বঞ্চিত হবো। তারা তাদের স্বার্থ হাসিল নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের সাধারণ কর্মচারীদের কথা তারা ভাবছেন না।
তিনি বলেন, মিডিয়ায় দেখলাম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নসহ বেশ কিছু নেতার হুমকি ও মহড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিএসসিসিতে যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে তার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

* লাঞ্ছিত করা হয়েছে ৭ জন কর্মকর্তাকে * দাফতরিক কাজেও চলে এসেছে স্থবিরতা * প্রশাসক মহ. শের আলী
ডিএসসিসি ভবনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আতঙ্ক ও অস্থিরতা
- আপলোড সময় : ০২-০৯-২০২৪ ১০:৫০:০৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ১২:৫৬:০৮ পূর্বাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ